একজন সফল এস এম ই চাষী
কুতুবুদ্দিন চুন্নু একজন সফল এস এম ই চাষী। তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নে জন্মগ্রহন করেন।ছোটবেলা থেকে তিনি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। ‘ভাল বীজে বেশি ফসল’ তিনি সেটা ভাল করেই জানতেন। তাই তিনি সর্বদা ভাল বীজ নিয়ে শঙ্কিত থাকতেন। বিভিন্ন মৌসুমে তিনি ভাল বীজ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। তিনি এবং তার এলাকার চাষিরা ভাল বীজ নিয়ে সচেতন। তিনি নিজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভাল বীজ কিনতেন এবং চাষীদেরকেও ভাল বীজ কিনতে উৎসাহিত করতেন। কিন্তু প্রায়শই তিনি নিম্ন মানের এবং বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠানের নামে নকল বীজ কিনে ধরা খেতেন। এতে তাঁর ব্যবসায়িক লোকসান হত এবং কৃষি কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতেন। অবশেষে তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পরামর্শক্রমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ এর অন্যতম সফল প্রকল্প, কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ (তৃতীয় পর্যায়ে ) একজন এস এম ই চাষী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা হিসাবে নথি ভুক্ত হন। তিনি পাঁচ বছরের জন্য উক্ত প্রকল্পের সাথে চুক্তি বদ্ধ হন। উক্ত প্রকল্পের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন মৌসুমের জন্য প্রয়োজনী ভাল বীজ, সার, নিড়ানি ও অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমের জন্য টাকা দেওয়া হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত শস্য থেকে প্রাপ্ত ভাল বীজ তিনি ইউনিয়নের অন্যান্য চাষীদের জন্য মজুদ রাখবেন এবং ন্যায্য মূল্যে অন্যান্য কৃষকের নিকট বিক্রি করবেন । শস্য থেকে প্রাপ্ত ভাল বীজ তিনি যেন ভাল ভাবে ইউনিয়নের অন্য কৃষকদের নিকট বিক্রি করতে পারেন তাঁর জন্য তাঁকে ওয়েট মেশিন, সিলিং মেশিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনোগ্রাম সম্বলিত প্যাকেট এবং ভাল বীজ বাছাই করার জন্য বিভিন্ন গ্রেডের ছাকনি প্রদান করা হয়। প্রথম বার রবি মৌসুমে তিনি সরিষা করেন। তিনি প্রায় ২০০০ কেজি বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন। খরিপ মৌসুমে তিনি তিল করেন। তিনি তিলের প্রায় ১০০০ কেজি বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন। নবাবগঞ্জ উপজেলার সুযোগ্য কৃষি অফিসার, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাঁর বীজ সংরক্ষণ কার্যক্রম তদারকি করেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি উক্ত সংরক্ষনকৃত বীজ প্রকল্প কতৃক প্রাপ্ত প্যাকেটে প্যাকেটজাত করে ইউনিয়নের সারের ডিলার ও অন্যান্য খুচরা সার বিক্রেতার মাধ্যমে তিনি ইউনিয়নের কৃষকের নিকট ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করেন। এস এম ই মাঠ দিবস ও রিভিউ ডিসকাশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনাব কুতুবুদ্দিন চুন্নুকে। উপস্থিত অন্য কৃষকদের নিকট একজন বীজ উদ্যোক্তা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে তাঁর বীজের গ্রহনযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়। আজ উন্নত জাতের সরিষায় শোল্লা ইউনিয়নের ফসলী জমি ভরে উঠেছে। ভাল বীজের অভাবে যারা তেল জাতীয় শস্যের আবাদ ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা আবার নতুন আশায় বুক বেধেছেন। এখন শোল্লা ইউনিয়ন সরিষায় বাম্পার ফলনের অপেক্ষায় আছে। তিলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ বছর তিনি মাশকলাই এর বীজ পেয়েছেন। ফলনও ভাল হয়েছে আশা করা যাচ্ছে তিনি এর থেকে ভাল ফলন পাবেন এবং ভাল বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তিনি ভাল বীজ বিক্রি করে একদিকে যেমন কৃষকের আস্থা অর্জন করেছেন তেমনি অর্থনৈতিক ভাবেও লাভবান হয়েছেন। আজ শোল্লা ইউনিয়নের কৃষকের মুখে মুখে তাঁর সাফল্যের গল্প শোভা পায়। এভাবে তিনি একজন সাধারন চাষি হতে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ (তৃতীয় পর্যায়ে ) প্রকল্পের সহায়তায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি কঠোর পরিশ্রমী এবং সৎ মানুষ। তিনি আশা করছেন সামনের মৌসুম গুলোতে প্রকল্প থেকে্ সরিষা, তিল এবং মাসকলাই এর পাশাপাশি অন্যান্য তেল ও ডাল জাতীয় শস্যের বীজ পাবেন এবং ইউনিয়নের বীজের চাহিদা মেটাতে পারবেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS