Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
মায়ারাণী বাউল
ছবি
ডাউনলোড

মায়ারাণী বাউলের সফলতার গল্প

             চেষ্টা ও পরিশ্রম করলে যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয় তা প্রমান করেছে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা মায়া রাণী বাউল। কৃষি কাজ করে নিজের ভাগ্য বদলে দিয়ে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের রোল মডেল।

            অন্যান্য গৃহবধুর মতোই চার দেওয়ালের গন্ডির মধ্যে নিরিবিলি জীবন যাপন করার কথা থাকলেও মায়ারাণী বাউল ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। অদম্য স্পৃহা ও প্রবল সাহসের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে একজন নারী উদ্যোক্তা এবং সফল কৃষাণী। কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি “বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদক ২০১৭” লাভ করেছেন। কিন্তু তাঁর এই বিরল অর্জন এবং সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠা একদিনে সম্ভব হয়নি। তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পিছনে রয়েছে তাঁর নিরলস সাধনা,আগ্রহ, পরিশ্রম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নবাবগঞ্জ এর সার্বক্ষনিক সহযোগীতা। বাহ্রা ইউনিয়নের জগদিশ চন্দ্র বাউলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কিছুকাল পর তিনি স্বামীর সাথে তাদের জমির ফসলের অবস্থা দেখার জন্য মাঠে যান। তিনি তখন দেখতে পান তাদের প্রায়,১৯০ শতাংশ জমিতে শুধু কুমড়া জাতীয় সবজির চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে ভালোভাবে জমির যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । তখন তিনি নিজ উদ্যোগে পুরুষ শ্রমিকের সাথে কিছু নারী শ্রমিক নিয়োজিত করে নিজেও মাঠে নেমে পড়েন জমির এবং ফসলের রক্ষনাবেক্ষনের কাজে।

           তাঁর একাগ্রতা ও আন্তরিকতা এবং ফসল উৎপাদনে ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের দৃষ্টি আকর্ষন করে এবংতখন থেকেই উপজেলা কৃষি অফিস  তাকে একজন মডেল কৃষাণী হিসাবে তৈরি করতে উদ্যোগ গ্রহন করে, পাশা পাশি তার মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি বিস্তার করতে থাকেন । নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহনে সমৃদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করে  ধীরে ধীরে তার আয় বাড়তে থাকে। সবজি চাষ থেকে ৬-৭ বছরে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার মত তাঁর পুঁজি তৈরী হয়।

           ২০১৪ সালে বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে তিনি একটি বাছুর কিনেন। ২ বছর পর সেই গরু বাচ্ছা দেয়। তিনি গাভী কিনেন তাঁর ফসল উৎপাদনের লাভের টাকা দিয়ে। আজ তাঁর নিজের একটি ডেইরী ফার্ম রয়েছে। যাতে গরু রয়েছে ৭০ টি । ডেইরী ফার্ম  থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় হচ্ছে প্রায় ১৬,০০,০০০ টাকা। ফসল বিক্রি করে তাঁর বাৎসরিক আয় হচ্ছে প্রায় ৩,৫০,০০০-৪,০০,‌০০০ টাকা। কৃষির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এবং তার আয় থেকে তিনি প্রায় ১১৭ শতাংশ জমি কিনেছেন যার বাজারমূল্য ১ কোটি টাকার মত।

এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। কৃষির নতুন নতুন পরিধির প্রতি তাঁর আগ্রহ অপরিসীম আগ্রহ এবং কৃষির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর পদচারনা পরিলক্ষিত হয়।

           কৃষির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রযুক্তি, যেমন- সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, আলোক ফাঁদ, সবুজ সার উৎপাদন ইত্যাদি প্রযুক্তি তিনি সানন্দে গ্রহন করেছেন এবং আগের তুলনায় এখন তিনি অধিক মূল্যে সবজি বিক্রয় করতে  পারছেন।

         তিনি সম্প্রতি যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গাভী পালন এবং গরু মোটা জাতকরনের উপর তিনমাসের একটি প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেছেন। তাঁর ডেইরী ফার্মের গরুর গোবর থেকে তিনি বায়োগ্যাস উৎপাদন করেছেন। বর্তমানে তিনি কেঁচো সার উৎপাদনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং এই সারকে বানিজ্যিকীকরনের চিন্তা ভাবনা করছেন ।

          মায়ারাণী বাউলের জয় জয়কার ছড়িয়ে পড়েছে গোটা নবাবগঞ্জ উপজেলায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা মানুষ তার কাছে কৃষি কাজের পরামর্শ নিতে আসে। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতে, তাঁর সফলতার গল্প শুনতে আসে। তিনিও তাঁদের মাঝে ছড়িয়ে দেন তাঁর সফলতার কথা।

        মায়ারাণী বাউলের সফলতায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে কৃষি কাজে এগিয়ে আসার প্রতি সবাই উৎসাহী। দেশকে এবং নিজের ভাগ্যকে বদলে দেওয়ার এমন সুযোগ সকলে কাজে লাগাতে চান। অনেক নারীই তার এ উদ্যোগ অনুসরন করে তাঁর মতো স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।কৃষি ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য এবং অর্জন সবার জন্য এক অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। এক কথায় বলা যায় কৃষিক্ষেত্রে নবাবগঞ্জের মায়ারাণী  বাউল এখন বাংলাদেশের জন্য এক মডেল।